রেড মিট নিয়ে নানা প্রচার-অপপ্রচার সমাজে প্রচলিত। এসব কারণে অনেকে এই মাংস খাদ্যতালিকা থেকে একেবারেই বাদ দিয়ে দিয়েছেন। আবার অনেকে এই মাংস খাবেন কিনা দ্বিধায় আছেন।

বিশেষজ্ঞরা জানান, লাল মাংস যা গরুর মাংসে পাওয়া যায় তাতে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান থাকে। সাদা মাংসে মায়োগ্লোবিন নামে এক ধরনের আয়রন বা লোহাযুক্ত প্রোটিন কম থাকে, আয়রনের রং যেহেতু লাল তাই মায়োগ্লোবিন কম থাকার জন্য সাদা মাংসের রং হালকা থাকে। সাদা মাংস সাধারণত পোলট্রি অর্থাৎ মুরগি ও টার্কির কিছু কিছু অংশে যেমন বুকের মাংসপেশিতে পাওয়া যায় কিন্তু পায়ের রানের মাংসে আবার মায়োগ্লোবিন বেশি থাকায় মাংসের রং লাল।

সম্পৃক্ত চর্বিতে খারাপ কলস্টেরল বা এলডিএল কলস্টেরল বেশি থাকে ও এই কলস্টেরল শরীরের বিভিন্ন রক্তনালিতে জমা হয়ে রক্তনালিতে ব্লক বা অ্যাথেরোস্কেলোরেটিক প্লাক তৈরি করে। লাল মাংসে এলডিএল বা খারাপ কলস্টেরল বা সম্পৃক্ত চর্বি সাদা মাংসের তুলনায় বেশি থাকে। কিন্তু যে পাখি উড়ে যেমন হাঁস তাদের বুকের মাংসেও মায়োগ্লোবিন বেশি থাকায় মাংসপেশি লাল। মাছের মাংস সাদা মাংস।

লাল মাংস সাধারণত পশুর মাংসে বিশেষ করে গরুর মাংসে পাওয়া যায়। লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত মাংস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কারণ লাল মাংসে সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে ও লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত মাংসে পেটের নাড়ির ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি, লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত মাংস পাকস্থলী, অগ্নাশয়, খাদ্য নালির ও অন্ত্রের ক্যান্সার করে। ধারণা করা হয় লাল মাংসে যে সম্পৃক্ত চর্বি বেশি থাকে তা ও লাল মাংস রান্নার সময় যে কার্সিনোজেন তৈরি হয় তা এবং মায়োগ্লোবিনের যে আয়রন থাকে তা কিছু পরিবর্তিত হয়ে যে যৌগ তৈরি করে তা ক্যান্সার হওয়ার জন্য দায়ী।

লাল মাংসের খাদ্য উপাদান এর উপকারি ও ক্ষতিকর দিক নিয়ে যুগান্তরকে পরামর্শ দিয়েছেন মেডিনোভা হাসপাতালের মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. তৌফিকুর রহমান ফারুক।

লাল মাংস যা গরুর মাংসে পাওয়া যায় তাতে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান থাকে। গরুর মাংসে আয়রন বা লোহা পাওয়া যায় যা অন্ত:সত্ত্বা নারী, বাড়ন্ত শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে, এ লোহা বা আয়রন অন্ত্রে সহজে শোষিত হয়।

এ মাংসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি১২ আছে যা রক্ত তৈরিতে ও স্নায়ু গঠনে ভূমিকা রাখে।

গরুর মাংসে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক নামক মিনারেল বা খনিজ পদার্থ থাকে যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। চর্বি ছাড়া গরুর মাংসে অর্থাৎ লিনকাট মাংসে যেহেতু চর্বির পরিমাণ অনেক কম থাকে ও প্রচুর প্রোটিন থাকে তাই ৩ আউন্স চর্বি ছাড়া মাংসে মাত্র ১৮০ ক্যালরি শক্তি থাকে কিন্তু ১০টিরও বেশি জরুরি খাদ্য উপাদান থাকে।

১৮ বছর ধরে পরিচালিত ৭২০০০ নারীদের ওপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ওয়েস্টার্নদের মতো বেশি বেশি লাল মাংস, মিষ্টি জাতীয় খাবার ও ফ্রেন্স ফ্রাই বা আলু ভাজা খেতেন তাদের হৃদরোগ, ক্যান্সার ও অন্য কিছু কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। লিনকাট বা চর্বি ছাড়া মাংসে অবশ্যই ৩ আউন্স পরিমাণ মাংসে ১০ গ্রামের কম মোট চর্বি, ৪.৫ গ্রামের কম সম্পৃক্ত চর্বি ও ৯৫ মিলি গ্রামের কম কলস্টেরল থাকতে হবে। তাই গরুর মাংস কেনার সময় লেবেল দেখে কিনতে হবে, যদি মাংস প্রাইম ধরনের হয় তবে মাংস সুস্বাদু ও নরম হলেও মাংসে সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ অনেক বেশি। সিলেক্ট গ্রেডে চর্বির মাত্রা কম থাকে অর্থাৎ লিনকাট মাংস।

তাছাড়া যে গরু লালনপালনের সময় শস্যদানা বেশি খাওয়ানো হয় সে সব গরুর মাংসে চর্বি বেশি থাকে ও যে গরু লালনপালনের সময় বিভিন্ন ধরনের ঘাস বেশি খাওয়ানো হয় সেসব গরুর মাংসে চর্বি কম থাকে ও বেশি পরিমাণে হৃদবান্ধব ওমেগা-৩ অসম্পৃক্ত চর্বি বেশি থাকে।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.