পরিবারের পছন্দে বিয়ে করে ফেসবুকের মাধ্যমে পরকীয়ায় জড়িয়ে প্রায় বছরখানের আগে প্রবাসী স্বামীর ঘর ছেড়ে মো. সবুজ বিশ্বাস (২৬) এর হাত ধরে পালিয়েছিল এক গৃহবধূ। মঙ্গলবার হাটহাজারীর ভাড়া বাসা থেকে সবুজের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে হাটহাজারী উপজেলার ধলই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড মুনিয়া পুকুর পাড় এলাকার এনায়েতপুর বাজারস্থ মো. দিদারুল আলম নামে এক ব্যক্তির মার্কেটের ৩য় তলার একটি ভাড়া বাসা (৪নং কক্ষে) থেকে এসআই কবির হোসেন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে সবুজের লাশ উদ্ধার করেছে।
নিহত সবুজের জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী তার তার জন্মস্থান খুলনা জেলার তেরোখাদা উপজেলার বারাসাত ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড পূর্ব কাটেংগা হলেও বাড়ি ঠিকানা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন খিলগাঁও সি ব্লকে। তার পিতার নাম আবদুল হান্নান বিশ্বাস। তিনি পেশায় একজন কৃষক। সবুজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করে বছরখানের আগে একটি বেসরকারি প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরিতে যোগদান করেছিলেন বলে জানা গেছে।
ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে সবুজের স্ত্রী জানান, গত ১১ মাস পূর্বে তার প্রথম স্বামীর সঙ্গে সংসার করা অবস্থায় ফেসবুকে সবুজ বিশ্বাস নামে এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয়। এর সূত্র ধরে তার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। এক পর্যায়ে বিয়ের আশ্বাসে তিনি স্বামীর বাড়ি থেকে ৭ বছর ও ৩ বছর বয়সী দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঢাকায় গিয়ে একত্রে সংসার শুরু করেন। গত ২৮ জুন তার দ্বিতীয় স্বামী তাকে ঢাকা থেকে হাটহাজারীর মুনিয়া পুকুর পাড় এলাকায় নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় উঠেন।
তিনি জানান, কিছুদিন ধরে নিকাহনামা নিবন্ধন করা নিয়ে তার স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া চলে আসছিল। এরমধ্যে গত ২৯ জুলাই তিনি কলহের জের ধরে তার এক আত্মীয়ের বাসা চলে যান। গত সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে স্বামীর বিশেষ অনুরোধে তাদের ভাড়া বাসায় স্থানীয় এলাকাবাসী মো. আবদুর রহিম, মো. নাছির ও তার খালাতো বোনকে নিয়ে একটি বৈঠকে বসেন।
তিনি আরও জানান, বৈঠকে তার ও স্থানীয়দের চাপে পড়ে সবুজ সবার সামনে প্রতিজ্ঞা করে যে, মঙ্গলবার সকাল ১০টার মধ্যে তার স্ত্রীর হাতে সে নিকাহনামা বুঝিয়ে দিবে। এমনটা সিদ্ধান্ত হওয়ার পরে তিনি তার আত্মীয় বাসায় চলে যান। ওই সময় তার স্বামী বাসায় একা ছিল। পরে মঙ্গলবার তিনি জানতে পারেন তার স্বামী গলায় মাফলার দিয়ে পেঁচিয়ে ফাঁস লাগিয়ে তাদের বাসার রান্না ঘরে আত্মহত্যা করছে।
নিহত সবুজের ছোট ভাই মো. শাহেদ বিশ্বাস ও বোন শিফা বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, তাদের বড় ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। তার ভাইয়ের বিয়ে করার বিষয়টি তাদের কাছে অজানা। এ ঘটনায় তারা তার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করবে। ইতিমধ্যে তারা চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন জানিয়েছেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী হাটহাজারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাজিব শর্মা জানান, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশের গলায় ফাঁসের ও বাম চোখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। দুই সন্তানসহ এক প্রবাসীর স্ত্রী পালিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করা, অত:পর নিকাহনামা নিবন্ধন না করা নিয়ে তাদের মধ্যে কলহ চলছিল। সবকিছু মিলিয়ে মৃত্যুটি রহস্যজনক বলে মনে হচ্ছে।
হাটহাজারী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে তদন্ত করছে পুলিশ। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।
Array