সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আলোচনায় এখন রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার (মুকুল) ও আওয়ামী লীগের নারী বিষয়ক উপ-কমিটির বহিষ্কৃত সদস্য হেলেনা জাহাঙ্গীর। প্রথমজন ফোনালাপ ফাঁসে এবং দ্বিতীয়জন ফেসবুকে ভুঁইফোড় সংগঠনের প্রচারণা চালিয়ে এ আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছেন। দুজনেরই রাজনৈতিক প্রতিপত্তি দেখানোর মনোভাব রুষ্ট করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়কেও।
অভিভাবক ফোরামের নেতা মীর সাহাবুদ্দিন টিপুর সঙ্গে কামরুন নাহারের ফোনালাপের ৪ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের একটি ক্লিপ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফোনালাপে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শোনা যায় তাকে। নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী পরিচয় দিয়ে কথোপকথনের এক পর্যায়ে কামরুন নাহারকে বলতে শোনা যায়, তিনি বালিশের নিচে পিস্তল ও ব্যাগে রিভলবার রাখেন। এমন আরও কিছু বক্তব্য রয়েছে যা প্রকাশ যোগ্য নয়। এ নিয়ে ভিকারুননিসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিব্রতবোধের কথা জানাচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, এই ফোনালাপে ভিকারুননিসার সুনাম ও ঐতিহ্য ক্ষুণ্ন হয়েছে।
জানা গেছে, ফোনালাপের সূত্রপাত সম্প্রতি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শাখা বেইলী রোড ক্যাম্পাসে পশুর হাট বসানোকে কেন্দ্র করে। ঈদুল আজহার দুই তিনদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিবার নামে একটি গ্রুপ থেকে মূল ক্যাম্পাসে গরুর হাট বসেছে এমন সচিত্র তথ্য দেয়া হয়। এ নিয়ে ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হলে রাতের আঁধারেই গরুর হাট সরিয়ে নেয়া হয়। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষ এই হাট বসানোর অনুমতি দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে করোনাকালে বাসায় বসে অফিস করারও অভিযোগ ওঠে। অনেক অভিভাবক তাকে গিয়ে অফিসে পান না। একই কাজের জন্য একাধিক দিন দৌঁড়ঝাপ করতে হয়, এমন তথ্যও প্রচার হয়। গরুর হাট বসানো ও উঠিয়ে ফেলাকে কেন্দ্র করেই মীর সাহাবুদ্দিন টিপুর সঙ্গে কথোপকথনের এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে গালিগালাজ করেন কামরুন নাহার।
তার ওই ফোনালাপ প্রসঙ্গে সিনিয়র সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন ‘একজন প্রধান শিক্ষিকার ভাষা যদি হয় পৃথিবীর নোংরা রাস্তার পাশে থাকা কারও চেয়ে জঘন্য, বালিশের নিচে থাকে পিস্তল আর ব্যাগে রিভলবার, সাথে অসভ্য ক্যাডার, তাহলে তার হাতেই একটি বিখ্যাত স্কুলের সর্বনাশ। ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে করেছেন, হলের ছাত্রলীগ নেত্রী ছিলেন, তার মানে এটার গৌরব রাস্তায় মিশিয়ে দেয়ার অধিকার নেই। এটা ব্যবহার করে পেশাগত জীবনে সুবিধা নিচ্ছেন নিন। তাই বলে এমন ঔদ্ধত্য আর অশালীন নোংরা ভাষায় গালিগালাজ নোংরা দম্ভ দেখাবার অধিকার নেই। জঘন্য বিকৃতরাই পারে এমন। এমন নোংরা ভাষা ব্যবহারে অভ্যস্ত একদল সমাজে মুখোশ পরে হাঁটে। কোনো সুস্থ মানুষ এদের ভাষা সমর্থন দূরে থাক, শুনতেই পারে না। প্রধান শিক্ষিকাসহ এরা পরিবার থেকে কী শিক্ষা পেয়েছেন? উচ্চশিক্ষা কী দিয়েছে?ছাত্রীদের কী শিক্ষা দেবেন? বোঝা যাচ্ছে।’
ফোনালাপের এই ভাষায় বিস্ময় থেকে প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সত্যি সত্যি উনি শিক্ষক? কলেজের প্রিন্সিপাল? সত্যি! সত্যি!! সত্যি!!!’
মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ডা. আবদুর নূর তুষার তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘উনি কি সত্যিই ভিকারুননিসা নূন স্কুলের প্রিন্সিপাল? নাকি বিকারগ্রস্ত হয়ে বিকারুননিসা হয়ে গেলেন? উনি ফেসবুকে গালিসাহিত্য পড়ালে পারেন। পিস্তল বালিশ গালি ক্ষমতা। উফফ হোয়াট আ লেডি মাস্তান!’
Array